বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইন্সটিটিউট এর চিকিৎসক, সেবিকা ও অন্যান্যরা অসাধারণ টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে অভিনব এক সার্জারি সফল ভাবে সম্পন্ন করেছেন। 

নাম বেবি, বয়স ৫ বছর। বাচ্চাটির জন্মগত রোগটির নাম Cloacal exstrophy।  শিশুদের যেসব জন্মগত ত্রুটি আছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে জটিল এটি। এই রোগে বাচ্চার স্বাভাবিক মলদ্বার এবং পস্রাবের রাস্তা থাকেনা। পেটের নিচের দিকে খাদ্য নালী ও পস্রাবের থলি খোলা থাকে। সেখান থেকে সবসময়ই পস্রাব ও পায়খানা বের হতে থাকে। 

বেবির ক্ষেত্রে এই সমস্যাটা আরো জটিল ছিল কারন এর পাশাপাশি ওর জন্মগত ভাবে বাম কিডনি ও পস্রাবের থলি তৈরি হয়নি।  জন্মের পরপরই দুইবার অপারেশন এর মাধ্যমে তার পেটে দুইটা স্টোমা করা হয়, এর একটা দিয়ে পায়খানা আসত তবে পস্রাব  আসত দুইটা দিয়েই! ৫ বছর বয়সে যা একটি বড় সমস্যা হিসাবে দেখা দেয়। সবসময়ই শরীর ও জামা ভেজা থাকতো, স্কুলে যেতে পারে না। বাবা মা অনেক ডাক্তার এর পরামর্শ নিয়েছেন, তারা বলেছেন – এভাবেই সারাজীবন থাকতে হবে, এর বেশি কিছু করা যাবে না। 

আমরা অনেক চিন্তা করে বেবি র খাদ্য নালীর একটি অংশ কেটে পস্রাবের থলি বানানোর পরিকল্পনা করি, যেখানে তার পস্রাব জমা হবে এবং সে নির্দিষ্ট সময় পর পর সেই পস্রাব বের করে দিতে পারবে। এতে করে তার শরীর ও জামা সবসময়ই শুকনো থাকবে এবং সে স্বাভাবিক সামাজিক জীবন যাপন করতে পারবে। 

ওর বাবা মা ও আত্মীয় স্বজনদের সাথে কথা বলে আমরা এই জটিল ও অভিনব অপারেশন এর প্রস্তুতি নেই। আমাদের জানামতে বাংলাদেশে এর আগে এই অপারেশন হয়নি। আমাদের সার্জারি টিম দক্ষ এনেস্থটিস্ট টিম, ওটি নার্স ও অন্যান্য স্টাফদের সহায়তায় অপারেশন টি খুব দক্ষতার সাথে শেষ করতে সক্ষম হয়। 

সমস্যা শুরু হয় অপারেশন এর পরদিন থেকে। অজানা কারণে বেবি র একমাত্র কিডনি টি কাজ করা বন্ধ করে দেয়। তার শরীর ফুলে যেতে থাকে, ফুসফুসে পানি জমে শ্বাস কষ্ট শুরু হয়। আমরা তখন জরুরি ভিত্তিতে যোগাযোগ করি আমাদের দক্ষ শিশু নেফ্রলজি বিভাগের সাথে। ডাঃ তারান্নুম খন্দকার রাশা ও ডাঃ তানিয়া খুব দক্ষতার সাথে তাদের চিকিৎসা শুরু করেন। কিন্তু সমস্যা হয় যখন রোগী কে আই সি ইউ তে ট্রান্সফার করার প্রয়োজন হয় কারন এর জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক স্বচ্ছলতা বেবির পরিবারের ছিলনা। এই অবস্থায় এনেস্থিসিয়া বিভাগের ডাঃ কনক ভাই রোগী কে পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে রাখার ব্যবস্থা করেন এবং ডাঃ আল আমিন (কার্ডিয়াক রিকভারি)  সেন্ট্রাল ভেনাস লাইন করে দেন। পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে র নার্স রা চমৎকার সেবা দেন। আস্তে আস্তে রোগী র কিডনি কাজ শুরু করে, পস্রাব আসা শুরু হয়, শরীর ফোলা কমতে থাকে। রোগী সারাদিন পানি খেতে চাইতো, কিন্তু ব্যালেন্স ঠিক রাখার জন্য তাকে পানি কম দেওয়া হত। আমি যখন ওকে দেখতে যেতাম, ও বলত – বাবা, পানি খাব, পানি খুব মজা লাগে! 

এখন সে মোটামুটি সুস্থ, আমাদের তৈরি করা পস্রাবের থলি কাজ করছে, তার শরীর ও জামা ভেজা থাকেনা। আমরা ওকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়েছি। সকল প্রশংসা আল্লাহর! 

এই জটিল সার্জারি ও এর পরবর্তী সেবায় যারা সহযোগিতা করেছেন সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা ❤️

অপারেশন এর আগে
অপারেশন এর সময়
নতুন মুত্রথলি
অপারেশন এর পর